ঢাকা , বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫ , ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
১৪ ভারতীয় জেলে কারাগারে ফুলবাড়িয়ার সাবেক এমপি পত্নী হাসিনা উদ্দিনের জানাজা সম্পন্ন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদীতে ঘুরতে গিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু জলঢাকায় বাকপ্রতিবন্ধী রঞ্জনার মানবেতর জীবন সংগ্রাম বরগুনায় কৃষি সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান বিষয়ক মতবিনিয় সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামীকরণসহ বেশ কিছু দাবি জামায়াতের সুন্দরবন মার্কেটে অবৈধ দোকানে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য জুলাই গণঅভ্যুত্থান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ : রাষ্ট্রপতি সাত কলেজকে চার হাইব্রিড মডেলে স্কুলে বিভক্ত করে পাঠদান ঢাকায় কাউন্সিলরকে না পেয়ে বোনকে গুলি করে হত্যা জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ৬ সাংবাদিকের বিচার নিয়ে আরএসএফ-এর বিবৃতি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় ‘মঞ্চ ৭১’-এর ৫ দফা দাবি ফরিদপুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও দোয়া আমতলীতে ৫ আগষ্ট পালিত,জুলাই শহীদদের জন্য দোয়া কামনা আমতলীতে তৃনমুলে বিট পুলিশিং মিটিং অনুষ্ঠিতব্য রাজনৈতিক সহিংসতায় ১১ মাসে নিহত ১২১ আহত ৫১৮৯-টিআইবি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় শীর্ষ ৫ দেশের তালিকায় চতুর্থ বাংলাদেশ তারেক রহমান হ্যাজ এ ড্রিম-মির্জা ফখরুল বিশ্ববাসী দেখবে ৩৬ জুলাই উদ্যাপন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন

তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় শীর্ষ ৫ দেশের তালিকায় চতুর্থ বাংলাদেশ

  • আপলোড সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০৩:১৪:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৮-২০২৫ ০৩:১৪:০০ অপরাহ্ন
তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় শীর্ষ ৫ দেশের তালিকায় চতুর্থ বাংলাদেশ
বিশ্বের তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা শীর্ষ পাঁচ দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ তথ্য উঠে এসেছে বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’-এর প্রতিবেদনে।জাতিসংঘের পাঁচ সংস্থা এফএও, ইফাদ, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ মিলে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।একইসঙ্গে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) দেওয়া ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস’ শীর্ষক পৃথক এক প্রতিবেদনে তীব্র খাদ্যসংকটের তালিকায়ও বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বে তীব্র খাদ্যসংকটে থাকা ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ।দুই প্রতিবেদন অনুসারে, শুধু খাদ্যনিরাপত্তার সংকটেই নয়, স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ পিছিয়ে। এ বিষয়ে গত সাত বছরে অনেকটা উন্নতি হলেও এখনো দেশের ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। দেশের ১০ শতাংশের বেশি মানুষ অপুষ্টির শিকার।দুটি প্রতিবেদনই গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও কৃষি অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রতিবেদন দুটি বাংলাদেশের খাদ্যসংকটের একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরেছে। এ প্রতিবেদনগুলো ভাবনার সৃষ্টিকারী।তবে বাংলাদেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সরকার বলছে, এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে।এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে মূল প্রাধান্য দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিপর্যায়ে মানুষের যে সমস্যা, তা উপেক্ষিত। দেশে দৃশ্যমান ক্ষুধা হয়তো নেই, কিন্তু চাপা ক্ষুধা আছে। মানুষ স্বেচ্ছা কৃচ্ছ্রের মধ্যে চলে গেছে। সেটা বাধ্য হয়েই তারা করছে।
খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা: জাতিসংঘের পাঁচ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৫৩টি খাদ্যসংকটপীড়িত দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ২৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি। যেখানে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বলতে বোঝানো হয়েছে ব্যক্তি বা পরিবারের পর্যায়ে অর্থ বা অন্যান্য সম্পদের অভাবে খাদ্যপ্রাপ্তির সীমিত সুযোগ। এই তালিকায় শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে-নাইজেরিয়া, সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়া। যদিও জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্যসংকটে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা, দক্ষিণ সুদান, সুদান, ইয়েমেন ও হাইতি।প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা উপত্যকার শতভাগ মানুষ চরম খাদ্য অনিরাপত্তার মুখে রয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ সুদান ও সুদানের অর্ধেকের বেশি এবং ইয়েমেন ও হাইতির প্রায় অর্ধেক জনগণ এ ধরনের সংকটে দিন কাটাচ্ছে।এ নিয়ে এফএওর বাংলাদেশ কার্যালয়ের সিনিয়র ন্যাশনাল প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট অনিল কুমার দাস গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বের তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। এখানে কোনো তুলনা করতে যাচ্ছি না। তবে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে যে ভালো হয়নি, তা বলা যায়।
দারিদ্র্যের কোন সূচকে কী অবস্থায় বাংলাদেশ: দেশে ৪৪ শতাংশের বেশি বা ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না এখনো। ২০১৭ সালে এ অনুপাত ছিল ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ সাত বছরে উন্নত মানের খাদ্য না পাওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুষম খাদ্য না পাওয়ার দিকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে পাকিস্তান। দেশটির ৬০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পায় না। অথচ দেশটিতে সাত বছর আগে এমন মানুষের হার ছিল ৫৮ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারতের ৪০ শতাংশ মানুষ এ ধরনের ভালো খাবার থেকে বঞ্চিত। দেশটিতে ২০১৭ সালে এমন মানুষের হার ছিল ৫৯ শতাংশের কিছু বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় এ খাতে সবচেয়ে এগিয়ে মালদ্বীপ। দেশটিতে এমন খাবার না পাওয়া মানুষ মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ। ভুটানের ৪ শতাংশ এবং নেপালের ২০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত সুষম খাদ্য থেকে।প্রতিবেদনটিতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত ওজন কম থাকার হার বাংলাদেশে ১০ শতাংশ। ভারতে এ হার ১৮ এবং পাকিস্তানে ৭। বাংলাদেশে এ বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বকায় অন্তত ২৫ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানে যথাক্রমে তা ৩৩ ও প্রায় ৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের হার: দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো অপুষ্টির শিকার। তবে গত দুই দশকে এ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অপুষ্টির শিকার মানুষের হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভারত ও পাকিস্তানে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।প্রতিবেদনে ২০০৪ থেকে ২০০৬ এবং ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অপুষ্টির শিকার মানুষের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে বাংলাদেশে অপুষ্টির শিকার মানুষের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। এটি ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে এসে হয় ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। এখন ভারতের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ অপুষ্টির শিকার, পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৫ আর আফগানিস্তানে ২৮ শতাংশ।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপালে অপুষ্টির শিকার দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৩ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।প্রতিবেদনগুলো নিয়ে এফপিএমইউর মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের যথেষ্ট খাদ্য আছে। কীভাবে বাংলাদেশকে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীন দেশের তালিকায় রাখা হলো, তা নিয়ে জাতিসংঘের দপ্তরগুলোর সঙ্গে আমরা কথা বলব। খাদ্য যথেষ্ট থাকলেও তা হয়তো সবাই ঠিকমতো পাচ্ছে না, এটা হতে পারে। আবার নিরাপদ খাদ্য বা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যে মানুষের অভিগম্যতার সমস্যা থাকতে পারে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সুষম খাদ্যের জন্য ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা অনুসারে জনপ্রতি ব্যয় ৪ দশমিক ৪৯ ডলার। আগের বছর এটি ছিল ৪ দশমিক ৩৩ ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে আছে ভুটান। সুষম খাদ্য গ্রহণের খরচ বলতে বোঝানো হয়-একজন ব্যক্তির দৈনিক ২ হাজার ৩৩০ কিলোক্যালরি শক্তির চাহিদা পূরণ করে এমন খাদ্যের জন্য স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য এবং সবচেয়ে সাশ্রয়ী খাবার কেনার ব্যয়।উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে খাদ্য উৎপাদন এবং মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কিন্তু তারপরও খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি ভাবনার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ